স্কয়ার: চুলকানি মোকাবিলায় এক অসামান্য সমাধান
চুলকানি বা ত্বকের অস্বস্তি এমন একটি সমস্যা যা কমবেশি সকলেরই জীবনে উপস্থিত হয়। এর ফলে দৈনন্দিন জীবনযাপনে ব্যাঘাত ঘটে এবং মানসিক চাপ বৃদ্ধি পায়। বাজারে অনেক চুলকানির ঔষধ থাকলেও, ‘স্কয়ার’ নামক ঔষধটি বিশেষভাবে নজর কাড়ে এর উচ্চ কার্যকারিতা এবং দ্রুত ফলাফলের জন্য। আজকের ব্লগে আমরা চুলকানির ঔষধের নাম স্কয়ার এর উপাদান, কার্যপ্রণালী, ব্যবহারবিধি এবং সাবধানতাসহ বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করবো।
স্কয়ার কি এবং এটি কিভাবে কাজ করে?
স্কোয়ার চুলকানি বা আনোয়াজাইসিস একটি গুরুতর ধরণের চুলকানি রোগ যা প্রধানত খসখসে চামড়া এবং চুলের গোড়ায় সংক্রমণের কারণে দেখা যায়। এই রোগে চামড়ার উপরিভাগে সবুজাভ ক্রাস্টিং হয় এবং তলদেশে চুল কিংবা রোম উপড়ে যায়। চামড়ার গভীরে সংক্রমণ ঘটলে স্কোয়ার সৃষ্টি হয়। প্রায়শই পুষ্টি অভাবজনিত কারণেও এই রোগ দেখা দেয়।
স্কোয়ার চুলকানির প্রধান কারণ হলো ম্যালাসেজিয়া রূপি ছত্রাকনামী জীবাণু। এই জীবাণু চামড়ার উপরিতলে বাস করে এবং সংক্রমণ সৃষ্টি করে। তাই এই ধরণের চুলকানির চিকিৎসার জন্য প্রথমে জীবাণুনাশক ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। চুলকানির জন্য সাধারণত দুইধরণের স্কোয়ার ওষুধ ব্যবহার করা হয়:
১. জীবাণুনাশক ওষুধ: এগুলো আনটিবায়োটিক এবং আনটিফাংগাল ওষুধ। জীবাণুনাশক ওষুধের মধ্যে সেফ্যালেক্সিন, ক্লোট্রিমাজোল ইত্যাদি বেশি ব্যবহৃত হয়। এগুলো ওরাল এবং টপিক্যাল উভয় ফর্মেই ব্যবহৃত হয়।
২. স্টেরয়েড ওষুধ: স্কোয়ার চুলকানিতে প্রচণ্ড চুলকানি এবং সংক্রমণ থাকে। স্টেরয়েড ওষুধ দ্বারা চুলকানি এবং সংক্রমণ কমানো হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্টেরয়েড ওষুধকে জীবাণুনাশক ওষুধের সাথে যৌগিকভাবে ব্যবহার করা হয়।
এছাড়াও কিছু এন্টিফাংগাল শ্যাম্পু ও লোশন যেমন- কিটোকোনাজোল, সাইক্লোপাইরোক্স ওলামাইন ইত্যাদি ব্যবহার করা হয় স্কোয়ার চুলকানি রোগীদের ক্ষেত্রে। এগুলো চামড়ার ওপর থেকে জীবাণুমুক্ত করে।
ধারণা করা হয় যে, চুলকানির ঔষধের নাম স্কয়ার চুলকানিতে আক্রান্ত রোগীদের দীর্ঘ সময় ধরে গ্রহণ করতে হয়। শুধুমাত্র জীবাণুনাশক ওষুধই নয়, স্টেরয়েড ও এন্টিফাংগাল ওষুধগুলোও একযোগে গ্রহণ করলে এই রোগ থেকে দ্রুত সুস্থতা পাওয়া সম্ভব। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধপত্র গ্রহণ করা উচিত।
কোন ধরণের চুলকানিতে স্কয়ার ব্যবহার করা হয়?
চুলকানির ঔষধের নাম স্কয়ার বিভিন্ন ধরণের চুলকানিতে কার্যকর:
একজিমা
একজিমা একটি প্রদাহজনিত চামড়ার রোগ যা চুলকানিসহ বিভিন্ন লক্ষণ দেখায়। তবে একজিমার ক্ষেত্রে স্কোয়ার চুলকানির ওষুধ ব্যবহার করা হয় না। কারণ একজিমা সংক্রামক নয়, অর্থাৎ এটি জীবাণু বা ছত্রাকসৃষ্ট নয়। একজিমার চিকিৎসায় স্টেরয়েড ক্রিম, ইমিউনোমডুলেটর ও মলিশনরাইজার ব্যবহার করা হয়।
রিংওয়ার্ম
রিংওয়ার্ম একটি সংক্রামক চুলকানি রোগ যা ডারম্যাটোফাইট নামক ছত্রাক জনিত। এই রোগে চামড়ার উপরে লাল রিং আকৃতির দাগ দেখা যায়। রিংওয়ার্মের চিকিৎসায় জীবাণুনাশক এন্টিফাংগাল ওষুধ যেমন- গ্রিসিওফল্ভিন, টারবিনাফাইন, ক্লোট্রিমাজোল ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও স্টেরয়েড ক্রিম/লোশন ব্যবহার করা হয় চুলকানি কমাতে। তাই রিংওয়ার্মের ক্ষেত্রে স্কোয়ার চুলকানির মতো ওষুধই ব্যবহৃত হয়।
সোরায়াসিস
সোরায়াসিস একটি অস্বাভাবিক সেল বিভাজনজনিত প্রদাহজনক চামড়ার রোগ। এতে চামড়ায় মোটা, লাল ও খসখসে এলাকা দেখা যায়। সোরায়াসিসের উপশমে স্টেরয়েড ক্রিম, রিটিনয়েড ও বায়োলজিক ওষুধ ব্যবহার করা হয়। তবে যদি এই রোগের সাথে সংক্রমণ জড়িয়ে থাকে তাহলে জীবাণুনাশক অর্থাৎ স্কোয়ার চুলকানির ওষুধ যেমন- সেফালেক্সিন, মেট্রোনিডাজোল ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে, স্কোয়ার ব্যবহার করা হয় শুধুমাত্র সেই সব চুলকানি রোগের ক্ষেত্রে যেখানে জীবাণু বা ছত্রাক জড়িত থাকে। যেমন- রিংওয়ার্ম, স্কোয়ার চুলকানি এবং কিছু ক্ষেত্রে সোরায়াসিসের মতো জটিল রোগ। অন্যান্য চুলকানি রোগ যেমন- একজিমা, কনটেক্ট ডারম্যাটাইটিস ইত্যাদিতে স্কোয়ার চুলকানির ওষুধ প্রযোজ্য নয়।
স্কয়ারের ব্যবহারবিধি
স্কোয়ার চুলকানির জন্য ব্যবহৃত ক্রিমগুলির সঠিক ব্যবহার বিধি অনুসরণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ক্রিমগুলি যথাযথভাবে ব্যবহার না করলে প্রতীক্ষিত ফলাফল পাওয়া যাবে না। আবার অযথা ব্যবহারের ফলেও বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। তাই নিচের বিষয়গুলো মেনে চলাটা প্রয়োজন:
১. ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ক্রিম ব্যবহার করুন: স্কোয়ার চুলকানির জন্য ডাক্তার যে ক্রিমটি নির্দেশ করবেন, শুধুমাত্র সেই ক্রিমটিই ব্যবহার করুন। অন্য কোনো ক্রিম নিজ উদ্যোগে ব্যবহার করবেন না। ডাক্তারের নির্দেশিত পরিমাণ ও সময়ের জন্য ক্রিমটি ব্যবহার করতে হবে।
২. পরিষ্কার চামড়ায় ক্রিম লাগান: ক্রিম লাগানোর আগে আক্রান্ত এলাকাটি ভালোভাবে ধুয়ে নিন এবং পরিষ্কার করুন। জীবাণুমুক্ত করার জন্য এন্টিসেপটিক দ্রবণও ব্যবহার করতে পারেন। তারপর শুকনো চামড়ায় ক্রিমটি লাগাতে হবে।
৩. সঠিকভাবে ক্রিম লাগান: ক্রিমটি ভালোভাবে মেখে দিন। অতিরিক্ত ক্রিম লাগিয়ে অপচয় করবেন না। সাধারণত ক্রিমটি পাতলা স্তরে লাগাতে হয়।
৪. নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ক্রিম ব্যবহার করুন: ডাক্তার যে সময়কালের জন্য ক্রিম ব্যবহারের পরামর্শ দেবেন, সেই সময়ের বেশি করে ব্যবহার করবেন না। কারণ বেশিদিন ব্যবহারে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৫. ক্রিম লাগানোর কিছুক্ষণ পর হাত ধুয়ে নিন: ক্রিম লাগানোর পর হাত পরিষ্কার না করলে বাড়তি ক্রিম নিকটবর্তী স্থানে প্রসারিত হতে পারে। সেক্ষেত্রে চামড়ায় অন্যান্য সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৬. পুনরাবৃত্তি দিন: আক্রান্ত এলাকাটি সম্পূর্ণরূপে সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন ক্রিম লাগানো অব্যাহত রাখুন। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ীই ক্রিম লাগানো বন্ধ করবেন।
৭. সাইড ইফেক্ট লক্ষ্য রাখুন: যদি কোনো অস্বাভাবিক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করেন যেমন- বেশিমাত্রায় চুলকানি, প্রদাহ বা রাশ তাহলে সঙ্গে সঙ্গে ক্রিম বন্ধ করে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।
৮. ডেন্টাল স্টেরয়েড এড়িয়ে চলুন: ডেন্টাল স্টেরয়েড ক্রিম দীর্ঘস্থায়ী ব্যবহার করলে বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। তাই এগুলি অস্থায়ীভাবে ব্যবহার করতে হবে।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে, স্কোয়ার চুলকানির ক্রিম ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করা একান্ত প্রয়োজন। শুধুমাত্র ডাক্তারের নির্দেশনা অনুসরণ করেই এগুলি ব্যবহার করতে হবে। নিয়মকানুন মেনে ক্রিম ব্যবহার করলে স্কোয়ার চুলকানি দ্রুত নিরাময় হবে।
স্কয়ারের সাইড ইফেক্টস
স্কোয়ার চুলকানির ওষুধগুলি যেহেতু শক্তিশালী জীবাণুনাশক এবং স্টেরয়েড সমন্বিত ওষুধ, সেহেতু এদের ব্যবহারে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলো:
১. ত্বকের অতিরিক্ত শুষ্কতা বা ফাটা: স্কোয়ার ক্রিম বা লোশনে থাকা জীবাণুনাশক উপাদানগুলি ত্বকের প্রাকৃতিক অয়েল কমিয়ে দিতে পারে। ফলে ত্বক অতিরিক্ত শুষ্কতার সম্মুখীন হয় এবং কিছু ক্ষেত্রে ফাটাও দেখা দিতে পারে।
২. রেডনেস বা জ্বালা: স্টেরয়েড উপাদানগুলি ত্বকে রেডনেস বা জ্বালা পোড়া অনুভূতি তৈরি করতে পারে। অনেক সময় চামড়া লালচে হয়ে যায়।
৩. অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন: কিছু রোগী স্কোয়ার ওষুধের উপাদানগুলির প্রতি অ্যালার্জিক হতে পারেন। এতে রাশ, হরিদ্রা বা অ্যানাফাইল্যাক্সিসের মতো শারীরিক প্রতিক্রিয়াও দেখা দিতে পারে।
৪. দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারে ত্বকের পাতলা হয়ে যাওয়া: দীর্ঘস্থায়ী স্টেরয়েড ব্যবহারে ত্বক পাতলা এবং অস্বাভাবিক হয়ে যেতে পারে। এমনকি ভগ্নতা দেখা দিতে পারে। তাই স্কোয়ার ওষুধ শুধুমাত্র নির্দিষ্ট সময়কালের জন্য ও ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নেওয়া উচিত।
সুতরাং স্কোয়ার চুলকানির ওষুধগুলি ব্যবহার করার সময় সতর্কতা অবলম্বন করা বাঞ্ছনীয়। যেকোনো অস্বাভাবিক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করলে তৎক্ষণাৎ ওষুধ বন্ধ করে চিকিত্সকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এতে কোনো জটিলতা এড়ানো সম্ভব হবে।
সাবধানতা
স্কয়ার ব্যবহারের সময় কিছু বিষয় মনে রাখা দরকার:
প্রেগন্যান্সি এবং ল্যাক্টেশন: গর্ভাবস্থা এবং স্তন্যপানকালীন সময়ে এই ঔষধ ব্যবহারের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
চিকিৎসকের নির্দেশ: ঔষধের ব্যবহার চিকিৎসকের নির্দেশ অনুযায়ী করুন এবং নির্দিষ্ট সময়ের বেশি ব্যবহার এড়িয়ে চলুন।
উপসংহার
চুলকানির ঔষধের নাম স্কয়ার একটি অত্যন্ত কার্যকর সমাধান হতে পারে। এর উচ্চ কার্যকারিতা এবং ব্যাপক প্রয়োগের সুবিধা এটিকে চুলকানির ঔষধের মধ্যে বিশেষ স্থান দেয়। তবে, যেকোনো ঔষধের মতো, স্কয়ার ব্যবহারের সময় সচেতন থাকা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসরণ করা উচিত। ত্বকের যেকোনো ধরনের অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে অবিলম্বে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা উচিত। এইভাবে, স্কয়ার আপনার ত্বকের যত্নের নিশ্চিত সঙ্গী হয়ে উঠতে পারে।